বৌদ্ধধর্মের কালচারে অষ্টশীলের কত গুণ জানেন?
জ্ঞান অন্বেষণ ডেক্সঃ আমরা সেই কখন আষাঢ়ী পূর্ণিমা শুরু হবে সেই অপেক্ষায় বসে থাকি। আমাদের মতে, সেই তিনমাসের মধ্যেই অষ্টশীল নেয়া যাবে। তাও আবার তিন মাসে অষ্টশীল পড়বে মাত্র ১২টি। তন্মধ্যে কোনদিন হয়তো শরীর খারাপ কিংবা কোনদিন বাসায় গেষ্ট আসবে অথবা নিমন্ত্রণে যেতে হবে এই করতে করতে আমাদের অষ্টশীল নেওয়া হয় ১২টির মধ্যে মাত্র ৬/৭টি। বছরে যদি মাত্র ৬/৭ দিন অষ্টশীল রাখি তাহলে কেমনে হবে? সময় তো চলে যাচ্ছে। নির্বাণ লাভ কি এতই সহজ? আমরা তো সবসময় বলি দান, শীল ও ভাবনা করলে তবেই নির্বাণ। একটি বাড়ি নির্মাণ করতে হলে প্রথমে আমাদের খুঁটি দিতে হবে, তারপর দেয়াল তৈরী করতে হয় তারপর ছাউনি দিলে তবেই বাড়িটি সম্পূর্ণ হয়।
নাহলে ছাউনি না দিলে রোদ, বৃষ্টি সহসাই এসে ঢুকবে। চারিদিকে দেয়াল না দিলেও নিরাপদ নয়। ঠিক তেমনি শীল হচ্ছে খুঁটি, দান হচ্ছে চারিদিকে দেয়াল আর ভাবনা হচ্ছে ছাউনি। তিনটার সমন্বয় না থাকলে কোনদিন নির্বাণ লাভ করা যাবে না। এজন্য প্রথমেই শীলের মাধ্যমে পরিপূর্ণতা আনতে হবে। বছরের মধ্যে কখন আষাঢ়ী পূর্ণিমা শুরু হবে তখন অষ্টশীল নিব এই চিন্তা করে বসে থাকবেন না। প্রতি মাসে অন্ততঃ চারটি অষ্টশীল নেয়ার চেষ্টা করুন। আমরা পঞ্চশীল নিই ঠিকই কিন্তু প্রতিপালন করার জন্য বিন্দুমাত্র সচেষ্ট নই। কিন্তু যখন অষ্টশীল নিই তখন আমাদের মধ্যে একটু হলেও ভয় কাজ করে। আমি আজ অষ্টশীল নিয়েছি, তাই আমাকে বিভিন্ন অকুশল থেকে বিরত থাকতে হবে। আমরা অষ্টশীলের গুণ সম্পর্কে জানি না বলে অষ্টশীল নিতে আগ্রহী হই না। জানেন একদিন অষ্টশীল পালন যিনি করবেন তার পুণ্যের পরিমাণ কত? তার পুণ্যের পরিমাণ হবে এই পৃথিবীর একচ্ছত্র রাজার সমস্ত সম্পদের তিনগুণ। তাহলে আমাদের আর কিইবা প্রয়োজন। আমি এখন মরে গেলে কি যাবে আমার সাথে? আমার সাথে কেউ তো যাবে না।
এত বড় বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ছেলে-মেয়ে, ব্যাংকে সঞ্চিত টাকা, ধন সম্পদ কিছুই তো নিয়ে যেতে পারব না। নিতে পারব একটাই জিনিস। সেটা হচ্ছে কর্মফল। সুকর্ম করলে সুফল আর দুষ্কর্ম করলে তার ফল। তাহলে আমরা আমাদের যাত্রাপথের জন্য যেই সম্পদ বেশী প্রয়োজন সেটিই তো সঞ্চয় করব বেশী বেশী। তাহলে আর দেরী কেন? আজ থেকেই আমরা প্রতিজ্ঞা করি প্রতি মাসে ৪টি অষ্টশীল পালন করব। অষ্টশীল পালন করলে একদিকে আমাদের শীল পারমী পরিপূর্ণ হবে অন্যদিকে নিজেদের চিত্ত বিশুদ্ধি হবে পাশাপাশি যদি ভাবনা করি চিত্তের একাগ্রতা বৃদ্ধি পাবে। সকলের মঙ্গল হোক।
পৃথিবীর সকল দেব, নাগ, ব্রক্ষ্মা, যক্ষ, অসুর রাক্ষস, ভূত, প্রেত, সকল মনুষ্য, সকল অমনুষ্য, সকল হিংস্র জীবজন্তু, উপরে ভবাগ্রে থেকে নীচে অবীচি পর্যন্ত একত্রিশ লোকভূমির সকল সত্ত্ব-কে কায় মনো বাক্যে আমার সকল মৈত্রী এবং পুণ্যরাশি দান করছি। এই পুণ্যরাশি লাভ করিয়া সকলে সুখী হোক। সকলের মঙ্গলময় মনষ্কামনা পরিপূর্ণ হোক। সকলের চিত্ত অন্তর সুখী হোক, সুখী হোক, সুখী হোক।
Leave a Reply