সমথ এবং বিদর্শন ভাবনা কি..?
লিখছেন ঃ- স্থবির এম. ধর্মবোধি ভান্তে
আমারা প্রতিনিয়ত অষ্টমী, অমাবস্যা এবং বিভিন্ন পূর্ণিমা তির্থিতে ভাবনা করে থাকি।
ভাবনাকে সাধারনত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। ক, সমথ ভাবনা খ, বিদর্শন ভাবনা। আবার সমথ ও বিদর্শন ভাবনাকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করেছে, বিদর্শন গুরুগন।
উৎপত্তি ও বিনাশের অর্থ হলো জম্ম ও মরন। এই জম্ম মরনকে সংক্ষেপে দু:খ সত্য বলা হয়। জম্ম ও মরনকে যে চিত্ত দর্শন করে, তাকে মার্গ জ্ঞান বা মার্গ সত্য বলে। তাহলে বুঝতে পারছেন যে নিজের জ্ঞান দিয়ে নিজের মরন কে দর্শন বা জানতে পারাতাই হলো বিদর্শন।
অনেকে মনে করতে পারেন পাহাড়ে জঙ্গলে ভাবনা করতে পারলে বিদর্শন ভাবনা পরিপূণ্য হয়। এই ধারনা কিন্তু অত্যন্ত ভুল। কারন হিসাবে বলা যায়> চিত্তের উৎপত্তি ও বিনাশ আমাদের মধ্য আছে।আবার চিত্তে উৎপত্তি ও বিনাশ যে চিত্ত দর্শন করে তাও নাম রুপের মধ্যে আছে। এর থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, আমাদের দেহ ও মন বিদর্শন ভাবনার মুল কেন্দ্রস্থল। আসল কথা হলো নিজের মৃত্যু নিজে জানাটাই মুখ্য বিষয়।
মনে রাখবেন পাহাড় বন বিহারগুলি হচ্ছে সমথ ভাবনার কেন্দ্রস্থল,কারন সমথ ভাবনা করার জন্য শান্ত পরিবেশের প্রযোজন হয়। যেমন ধরুন দুধকে ভালো দই করতে হলে একটা পাত্রের মধ্য দিয়ে সুরক্ষিত জায়গায় রাখতে হয় যাতে বেশি নড়া চরা না হয়। নরা চড়া করলে দুধ বসবে না, আর দুধ না বসলে ভালো ধই পাওয়া সম্ভব নয়। একইরুপ চিত্তকে সমাধীস্থ করতে শান্ত ও কোমল পরিবেশের প্রয়োজন হয়। পরিবেশ অশান্ত হলে চিত্তও অস্থির হয়, ফলে সমাধিস্থ হওয়া কঠিন ও দেরী হয়।কিন্তু বিদর্শ ভাবনার জন্য এই সবয়ের প্রয়োজন হয় না যে কোন স্থানে বিদর্শন করা যায়।কারন বিদর্শন ভাবনায় স্মতি প্রস্থান অর্থাৎ সর্বদা জাগ্রতরই প্রকৃত মুখ্য বিষয়।
এই জন্য এক পদক্ষেপ বাড়ালেই বিদর্শন হয়। বিদর্শন ভাবনার অর্থ, দর্শন- বিজ্ঞান-শ্রবন-গন্ধ বিজ্ঞান- রস বিজ্ঞান- স্পর্শ বিজ্ঞানগুলি উৎপত্তি বিনাশকে দর্শন করা।কাজেই বিদর্শনের স্থান আমাদের শরীরই। চিত্ত মুখী বা অন্তর মুখী হতে পারলে হলো।সেই জন্য যে কোন স্থানে যে কোন পরিবেশে যে কোন সময় বিদর্শন করা যায়।কাজেই বিদর্শনের জন্য কোন পাহাড় বা অরণ্য কিংবা বন বিহারে প্রয়োজন হয় না।
এই বার আসি ভাবনা করতে হলে কি কি করা দরকার> প্রথমে আসনে বসবেন,শরীল সোজা রাখবেন, নিজের দৃষ্টি আরাই হাত দুরত্বে রাখবেন এই ভাবে বসলে শরীল সোজা হবে এবং শরীল ঝুকবে না,তারপর ,চক্ষু বন্ধ করে- নাকের আগায় দৃষ্টি নিবিষ্ট করে আশ্বাস ও প্রশ্বাসকে দেখতে থাকুন। শ্বাস – প্রশ্বাসের মধ্যে যেন আপনার মন নিবিষ্ট থাকে। অন্য কোন চিন্তা করবেন না। শ্বাস টানলে টানছি বলে জানুন আর শ্বাস ছাড়লে ছাড়ছি বলে জানুন, এই ভাবে করতে থাকুন।যদি মন শ্বাস প্রশ্বাস থেকে বিছিন্ন হয়ে যায়,তাহলে আবার শ্বাস- প্রশ্বাসকে মনে নিয়ে আসুন।
এই করতে করতে মন একাগ্র হতে থাকবে। শ্বাস প্রশ্বাসে মন ৩০ মিনিট থাকলে সমাধি পরিপক্ত হচ্ছে বলে জানবেন।সমাধী পরিপক্ক বলে নিজেও টের পাবেন।সমাধী হতে থাকলে নানা রকম নিমিত্ত আসবে, তারদিকে নজর দিবেন না, মনে শুদু শ্বাস প্রশ্বাসকে দেখতে থাকুন। এই ভাবে সাধনা করতে থাকলে সমাধী লাভ হবে। মনে প্রশান্তি আসবে, এবং সুখে বসবাস করা যায়। লোকিক সুখ থেকে লোকাত্তর সুখ অনুভব করা যায়।
শুদু বৌদ্ধ সম্পাদায় নয় বর্তমানে সারা পৃথিবীর মানুষ এই প্রন্থা অবলম্বন করে নিজের জীবন সুন্দর ও সার্থক করে তুলেছে আপনি কেন পারবে না। চলুন একবার চেষ্টা করে এবং ধীরে ধীর অভস্থ করে মানব জীবন কে সুন্দর ও সার্থক করে তুলি।
লিখক পরিচিতি- অধ্যক্ষ, ঐতিহাসিক পুণ্যতীর্থ আবদুল্লাপুর শাক্যমুনি বৌদ্ধ বিহার। ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম।
লিখক, গবেষক, বহুগ্রন্থের সম্পাদক, প্রকাশক ও অনুবাদক।
প্রকাশক ও সম্পাদক- জ্ঞান অন্বেষণ প্রকাশনী।
Leave a Reply