চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা পূজনীয় অধ্যাপক ড. জিনবোধি মহাথের মহোদয় “অমর একুশে স্মৃতি সম্মাননা -২০২২ পদক” লাভ করেন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা শহীদ দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা,গুনীজন সংবর্ধনা ও স্বাস্কৃতিক অনুষ্টানে যোগদান, শিক্ষা ও সমাজ সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য ” ইউনাইটেড মুভমেন্ট ফর হিউম্যান রাইটস ” এর পক্ষ থেকে অধ্যাপক ড. জিনবোধি মহাস্থবির মহোদয়কে “অমর একুশে স্মৃতি সম্মাননা -২০২২ প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের চলমান বিচারপতি এস এম মুজিবর রহমান সাহেব,সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি ও স্বাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জনাব লুৎফুল আহসান বাবু সাহেব,কবি সুফিয়া কামাল অডিটোরিয়াম,জাতীয় যাদু ঘর,ঢাকা,২৩/০২/২২ তারিখ বুধবার।
সার্বজনিন ভাবে তারঁই বিরল কৃতিত্বের জন্য এই সম্মাননা অতি অনন্দ ও গৌরবের বিষয়।
পূজনীয় ভান্তেকে অন্তরের গভীর শ্রদ্ধা ও নীরোগ দীর্ঘায়ু জীবন কামনা করি।
ড. জিনবোধি মহাস্থবির মহোদয়ের সংক্ষিপ্ত জীবনালেখ্য—-
ড. জিনবোধি মহাথেরো ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রামস্থ রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ঘাটচেক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বিপ্লবী সেনানী পিতা প্রয়াত যামিনী বড়য়া, মাতা প্রয়াতা স্নেহলতা বড়ুয়া। তিন ভাই এবং দুই বোনের মধ্যে তিনি সর্বকনিষ্ঠ। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ. অনার্স (পালি) এবং ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে পালিতে এম. এ. পাশ করেন। ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভারত-বাংলাদেশ সরকারের বৃত্তি নিয়ে পিএইচ.ডি. ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পালি বিভাগে অতিথি লেকচারার ছিলেন।
তিনি ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত নালন্দা বিদ্যাভবনেও কাজ করেছেন। বুদ্ধগয়া আন্তর্জাতিক সাধনা কেন্দ্রে সহ-সম্পাদক হিসেবে প্রায় ১০ বছর যাবত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাচ্যভাষা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন এবং ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে অধ্যাপক এবং বিভাগীয় সভাপতির পদোন্নতি লাভসহ বিভাগের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে ভূমিকা পালন এবং উদারপ্রাণ ব্যক্তিদের কাছ থেকে অনুদান নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তিপ্রাপ্তির জন্য সুব্যবস্থা করেন।
তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বহু সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োজিত আছেন। ‘বুডিস্ট রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন সেন্টার বাংলাদেশ’ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তার সম্পাদনায়—বোধিসম্ভার, সুগতসম্ভার, ঐতিহ্য ও দীপ্তি (২০০৮) নামক স্মারক এবং অধ্যাপক বাদল বরণ বড়ুয়ার সঙ্গে যৌথ সম্পাদনায় ‘অধ্যাপক মুনীন্দ্র রচনাবলী’ (২০০৬) প্রকাশিত হয়। তাঁর জীবনে সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হলো ত্রিপিটক শাস্ত্রের ‘ পটিসম্ভিদা মগ্গ গ্রন্থ ১ম খ-’ ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশ করেন এবং ২য় খ- প্রকাশের অপেক্ষায় আছে। তাছাড়াও বাংলা একাডেমি ঢাকা থেকে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় গবেষণা গ্রন্থ ‘বৌদ্ধ দর্শনে প্রজ্ঞাতত্ত্ব ও বিমুক্তি মাগ’। এ পর্যন্ত তিনি ১৪টির অধিক গ্রন্থ প্রকাশ করে সমাজকে উপহার দিয়ে যাচ্ছেন যথাক্রমে—পন্ডিত ধর্মাধার মহাস্থবির, তথাগতের বোধিবিধি, বঙ্গে ধ্যানচর্চা, জ্ঞানতাপস পূণ্ণানন্দ স্বামী, জ্ঞানতাপস শান্তরক্ষিত মহাস্থবির, রাজগুরু অগ্রবংশ মহাস্থবির, কর্মবীর ধর্মসেন মহাস্থবির (বর্তমান সংঘরাজ), পন্ডিত শীলানন্দ ব্রহ্মচারী, প্রিয় প্রিয়দর্শী (জীবনীগ্রন্থ ২০০৫) এবং আরও কয়েকটি ত্রিপিটক গ্রন্থ অনুবাদসহ পান্ডুলিপি প্রকাশের অপেক্ষায় আছে।
তিনি সমাজ, সদ্ধর্মের কল্যাণ ও বৌদ্ধ সাহিত্য চর্চার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে বার্মা সরকার থেকে মহাসদ্ধম্মজ্যোতিকাধ্বজ, ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে বনায়ন প্রকল্পের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার, ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে সমাজ কল্যাণ পরিষদ থেকে গোল্ড মেডেল ও ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে থাই গভর্ণমেন্ট ও থাইল্যান্ড ধম্মকায়া ফাউন্ডেশন থেকে সম্মাননা এবং ভারত থেকে বিজয়রত্ন উপাধি পেয়েছেন। ইতিমধ্যে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে চীন সফরকালে মাননীয় চীনের প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে বাংলাদেশ ও বৌদ্ধ ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরেন। তিনি বঙ্গবন্ধু সমাজ কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান এবং চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের উপাধ্যক্ষ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিশ্বশান্তি প্যাগোডা বাস্তবায়নের অন্যতম কর্ণধার।
বর্তমানে তিনি চট্টগ্রামের আনোয়ারাস্থ আন্তর্জাতিক প-িত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করে চলেছেন। তা ছাড়াও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক সহযোগিতায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য দু’টো পৃথক ছাত্রাবাস গড়ে তোলার জন্য সরকারিভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
Leave a Reply