
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি এন্ড বুড্ডিস্ট স্টাডিজ বিভাগের স্বনামধন্য শিক্ষক, শিক্ষায় একুশে পদক প্রাপ্ত ড. সুকোমল বড়ুয়াকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুনরায় সুপারনিউম্যারী প্রফেসর হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেছেন। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা স্বনামধন্য, পণ্ডিত, জ্ঞানী ও আলোকিত শিক্ষক তাঁদেরকেই এই পদে নিয়োগ প্রদান করে থাকেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কর্তৃক এ নিয়োগ দান করা হয়। তিনি ১লা সেপ্টেম্বর ২০২১ইং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি এন্ড বুড্ডিস্ট স্টাডিজ বিভাগে উক্ত পদে যোগদান করেন। এর পূর্বে তিনি অনারারী অধ্যাপক হিসেবে বিভাগে পাঠদানে যুক্ত ছিলেন।
বৌদ্ধতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের একজন স্বনামধন্য শিক্ষক। তিনি দেশ-বিদেশে বৌদ্ধতত্ত্ববিদ ও প্রাচ্যবিদ হিসেবে পরিচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৌদ্ধতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া-এর নামে একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়। এবং ড. বড়ুয়ার নামে একটি স্বর্ণপদকও প্রবর্তন করা হয়। তিনি ১৯৮৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত ও পালি বিভাগে যোগদানের পর ১৯৯৯ সালে অধ্যাপক এবং ২০০৯ সালে সিলেকশন গ্রেড প্রাপ্ত অধ্যাপক পদমর্যাদা লাভ করেন। ড. বড়ুয়া সংস্কৃত ও পালি যৌথ বিভাগের চেয়ারম্যান এবং পরবর্তীতে পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি বিভাগের ‘সেন্টার পর বুদ্ধিস্ট হেরিটেজ এ্যান্ড কালচার’ গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন।
ড. বড়ুয়া ১৯৮৬ সালে বানারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় হতে বৌদ্ধ মনোবিজ্ঞানের উপর পি.এইচ-ডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জগন্নাথ হলের বুদ্ধ ভাস্কর্যের স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ঢাকা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ কমিটির প্রথম অধ্যক্ষ ও আহবায়ক ছিলেন, যেটি বর্তমান মেরুল বাড্ডাস্থ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার ও বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশন নামে পরিচিতি। ড. বড়ুয়া শিক্ষকতা জীবনে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গবেষণা সংস্থা থেকে নানাবিধ উপাধি ও সম্মাননায় ভূষিত হন।
ড. বড়ুয়া প্রাচীন বিদ্যা ও শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০৬ সালে শিক্ষায় একুশে পদক পান। তিনি বাংলাদেশ সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড থেকে ‘ত্রিপিটক বিশারদ’ উপাধি লাভ করেন। ড. বড়ুয়ার উল্লেখযোগ্য যে সকল গ্রন্থ প্রকাশিত হয় তন্মধ্যে বাংলা একাডেমি থেকে ৪টি, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে ২টি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১টি, ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাস হতে ১টিসহ জাতীয় ও অন্যান্য প্রকাশনা সংস্থা থেকে মোট ১৫টি। সম্পাদিত ও সংকলিত গ্রন্থ সংখ্যা ৬টি। দেশ-বিদেশের সাময়িকী, ম্যাগাজিন ও জাতীয় দৈনিকসহ প্রকাশিত বাংলা-ইংরেজি নিবন্ধ সংখ্যা ১৯০। দেশ-বিদেশের এম,ফিল ও পি.এইচ-ডি থিসিস মূল্যায়ন সংখ্যা ১৫।
ড. বড়ুয়া দেশ-বিদেশের বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত এবং বোর্ড সদস্যও। তিনি বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষেত্র সক্রিয় একজন বুদ্ধিজীবী। তাঁর জন্ম চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানার ঐতিহ্যবাহী ঢেমশা গ্রামে। তাঁর পিতা ডা. গণেশচন্দ্র বড়ুয়া ও মাতা শিক্ষয়িত্ৰী বুদ্ধিমতী বড়ুয়া উভয়ই ছিলেন ধার্মিক ও শিক্ষানুরাগী। তাঁদের হাতেই ড. বড়ুয়ার বিদ্যা ও জ্ঞানের হাতে খড়ি। তাঁর একমাত্র কন্যা সংঘমিত্রা বড়ুয়া মানসী সাউথ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজের ইংরেজি শিক্ষিকা।
Leave a Reply