দীর্ঘ আট মাস পর বাংলাদেশকে কালো তালিকা মুক্ত করলো দঃ কোরিয়া
অসীম বিকাশ বড়ুয়া, সিউল দঃকোরিয়া
এশিয়ার ড্রাগন বলে খ্যাত বাংলাদেশী ইপিএস কর্মী তথা শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের দেশ দঃ কোরিয়াতে বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সময়ে বাংলাদেশ থেকে আসা চাটার্ড ফ্লাইটে বেশ কয়েকজনের করোনা পজিটিভ পাওয়ার কারণে গত বছরের ২৩ শে জুন থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্যে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য নতুন ভিসা নিষেধাজ্ঞা এবং অনিয়মিত বিমান চলাচল স্হগিত করার পর থেকে অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে আজ ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১, সোমবার থেকে পুনরায় প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোরিয়া গমনেচ্ছু বাংলাদেশী নাগরিকগণ ঢাকাস্হ দঃ কোরিয়া দূতাবাসের মাধ্যমে ভিসার আবেদন করতে পারছেন।
গণপ্রজতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, সিউল বাংলাদেশ দূতাবাস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বোয়েসেলের নিরবচ্ছিন্ন কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফল স্বরূপ দঃ কোরিয়া সরকার সম্প্রতি বাংলাদেশের নাগরিকদের উপর আরোপিত ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে । বিষয়টি সম্পর্কে ঢাকাস্হ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সিউলের বাংলাদেশ দূতাবাস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সত্যতা নিশ্চিত করেছে। ঢাকাস্হ দঃ কোরিয়ার দূতাবাস এক কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এই বিষয়ে অবহিত করে।
বোয়েসেলের ব্রিফিং চলাকালীন বাংলাদেশী ইপিএস কর্মীদের একাংশ।
বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ভিসা নিষেধাজ্ঞার পর থেকেই পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডঃ এ কে আব্দুল মোমিন, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন,দঃ কোরিয়াতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম বিষয়টি নিয়ে কোরিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সহ বাংলাদেশে নিযুক্ত দঃ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-গুন এর সাথে বারবার বৈঠক করে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে সমাধান করার তাগিদ দেন।নিষেধাজ্ঞা চলমান সময়ে একদিকে কোরিয়া গমনেচ্ছু বিপুল সংখ্যক উদ্বিগ্ন বাংলাদেশী ছাত্র ছাত্রী ও ইপিএস কর্মীদের সাথে এবং অন্যদিকে ঢাকাস্হ কোরিয়ান দূতাবাস ও সিউলের বাংলাদেশ দূতাবাস সহ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশের নাগরিকদের উপর কোরিয়া প্রবেশের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুখবরটি এল।অপর একটি ভিডিও বার্তায় ঢাকাস্হ দঃ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-গুন বলেন,কোভিড নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকার সফলতা অর্জন করেছে এবং সিউলের বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্টদূত আবিদা ইসলামের বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ ও কর্মকাণ্ডের তিনি ভূয়সী প্রশংসা করেন ।
এদিকে বেশ কিছু ইপিএস কর্মী ও শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, কোরিয়া যেতে কোভিড 19 সার্টিফিকেট নিতে বাংলাদেশীদের সতর্ক হতে হবে ।তারা বলেন, কিছু মানুষের জন্য পুরো ইপিএস এর বিশাল সম্ভাবনাময় বাজার ও হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রীদের স্বপ্ন নষ্ট করা যাবে না।ভূয়া করোনা সার্টিফিকেট ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে বাংলাদেশে নেগেটিভ হলেও কোরিয়াতে এসে পজিটিভ ধরা পড়ে ।উল্লেখ্য গত জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে কোরিয়া প্রবেশের ক্ষেত্রে নতুন আইন ৭২ঘন্টা পূর্বে(পিসিআর টেস্ট) পরীক্ষা করা করোনার সার্টিফিকেট অবশ্যই জমা দিতে হবে যা আগে এই নিয়ম ছিল না । এ ব্যাপারে ইপিএস কর্মী ও দঃ কোরিয়া প্রবাসী নওশাদ ফেরদৌস, ফজলুর রহমান মাসুম ও খাজা মামুন বলেন,কোরিয়াতে আসার আগে বাংলাদেশেও ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন করা গেলে এক্ষেত্রে করোনা পজিটিভ পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে ।
এ প্রসঙ্গে কোরিয়াতে ইপিএস কর্মীদের জন্য কোরিয়ান ফেডারেশন অফ মিডিয়ম এন্ড স্মল বিজনেস অর্গানাইজেশন এর একমাত্র সুযোগ্য বাংলাদেশী প্রশিক্ষক শেখ মুরাদ হোসেন বলেন, যারা ভিসা পেয়ে কোরিয়াতে আসবেন তাঁরা নিজেদের তথা জাতীয় স্বার্থে নিজেরা বিশেষ ভাবে সাবধানে থেকে নিজেদেরকে করোনা মুক্ত অবস্থায় ফ্লাই করবেন।প্রয়োজনে দুই এক সপ্তাহ পরে ফ্লাই করবেন।অনিশ্চিতভাবে একজন ও ফ্লাই না করার বিনীত পরামর্শ দিতে চাই ।একই সাথে রাষ্ট্রীয় সংশ্লিষ্ট অথরিটি কঠোরভাবে পুরোপুরি তদারকি করা আবশ্যক যাতে দ্বিতীয়বার ভূল করে খেসারত দিতে না হয়।তিনি আর ও বলেন,যারা সরাসরি দায়িত্ব পালন করবেন তাদেরকেও তদারকির আওতায় রাখতে হবে ।ইপিএস কর্মীরা নাম ইস্যু হওয়ার পর থেকে নিজেই পুরোপুরি নিরাপদ অবস্থানে থাকবেন।তাহলেই বাংলাদেশকে দ্বিতীয়বার খেসারত দিতে হবে না বলে মনে করি ।
ঢাকাস্হ দঃ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-গুন ভিডিও বক্তব্য রাখছেন ।
জানা গেছে, সমস্যা থাকার কারণে বাংলাদেশের তিনটি হাসপাতাল ও ল্যাবের করোনা সার্টিফিকেট গ্রহনযোগ্য হচ্ছে না ।এগুলো যথাক্রমে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন এন্ড রেফারেল সেন্টার, বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ।
আর ও জানা যায় করোনা পজিটিভ নিয়ে কোরিয়া প্রবেশ বন্ধ করার জন্য দঃ কোরিয়া ইনডিপেনডেন্ড আইনজীবী লি ইয়ং হো সহ আর ও দশ জন সাংসদ সদস্য সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রন ও প্রতিরোধ আইনের একটি সংশোধনী বিল পাস করেছেন যা কোরিয়ায় করোনামুক্তির জাল সনদ দখল কারীদের অথবা কোরিয়াতে প্রবেশের পর পজিটিভ পাওয়া গেলে ডিপোর্ট আইনের মাধ্যমে কোরিয়া ত্যাগে বাধ্য করা হবে এবং জরিমানা ও দিতে হতে পারে ।
সিউল বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়েও গত মে মাস থেকে এ পর্যন্ত 566 জন আটকে পড়া ইপিএস কর্মীকে দঃ কোরিয়া ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন।দেশে গিয়ে আটকে পড়েন ইপিএস কর্মী সহ প্রায় দুই হাজার দঃ কোরিয়া প্রবাসী বাংলাদেশী ।সিউল দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব মিসপি সরেন বলেন, এতদ সংক্রান্ত পরবর্তী যে কোন সংবাদ আমরা দূতাবাসের পেইজে আপডেট করবো । শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দঃ কোরিয়ায় আগত বাংলাদেশী নাগরিকদের মধ্যে কোভিড পজিটিভ পাওয়া গেলে আবার ও নতুন করে ভিসা নিষেধাজ্ঞা করা হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
You are my aspiration , I own few blogs and rarely run out from to post . Adan Cerino