কর্মিক চিত্তগুলো হচ্ছে সেই চিত্তগুলো, যাদের কর্মিক সক্ষমতা রয়েছে। এগুলো কুশল অথবা অকুশল প্রকৃতির হতে পারে। এ ধরনের চিত্তগুলোর মধ্যে চেতনা চৈতসিকটাই হচ্ছে কর্ম। যদিও কোনো চিত্তের উৎপত্তি ও বিলয়ের সাথে সাথেই সেই চিত্তের চেতনারও উৎপত্তি ও বিলয় ঘটে, কিন্তু সেই চেতনা যে কর্মশক্তি সৃষ্টি করলো, তা কিন্তু ফল না দেওয়া পর্যন্ত, অথবা কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিষ্ফলা না হওয়া পর্যন্ত ফুরিয়ে যায় না।
ফল চিত্তগুলো হচ্ছে কর্মিক চিত্তগুলোর ফলাফল। সেগুলোর কোনো কর্ম উৎপাদনের সক্ষমতা নেই।
ক্রিয়া চিত্তগুলো কর্মিক চিত্তগুলোর ফলাফলও নয়, আবার তাদের কোনো কর্ম উৎপাদনের সক্ষমতাও নেই।
অভিধর্মে যে সময়ের মাপকাঠি ব্যবহার করা হয় তার ভিত্তি হচ্ছে চিত্তক্ষণ। এটি হচ্ছে একটি চিত্তের আয়ুষ্কাল, যা এতই ক্ষণিকের যে, অর্থকথাবিদদের মতে, বিদ্যুৎ চমকানি অথবা এক চোখের পলক ফেলতে যে সময় লাগে তার মধ্যেই শত কোটি চিত্তক্ষণ পরপর অতিবাহিত হয়ে যায়। প্রত্যেক চিত্তক্ষণের আবার তিনটি ক্ষণ আছে: উৎপত্তি, স্থিতি ও বিলয় ক্ষণ। এক চিত্তক্ষণের মাঝে একটি চিত্ত উৎপন্ন হয়, এর ক্ষণিকের কাজটুকু সেরে ফেলে এবং এরপরে বিলুপ্ত হয়ে যায়, যার পরপরই আরেকটি চিত্তের উৎপত্তি ঘটে। এভাবে চিত্তক্ষণের ধারাবাহিকতায়, চেতনা প্রবাহ পানির ধারার মতো অবিচ্ছিন্নভাবে বয়ে চলে।
জীবনের প্রত্যেক মুহুর্তে যখন সক্রিয়ভাবে কোনো বিষয়বস্তু সম্বন্ধে জ্ঞাত হওয়া বা সচেতন হওয়ার মতো ঘটনা ঘটে না, তখন সেই চেতনা প্রবাহকে অবিচ্ছিন্ন রাখতে একটি বিশেষ ফল চিত্ত প্রত্যেক মুহুর্তে উৎপন্ন ও বিলুপ্ত হয়ে যায়, যে চিত্তকে বলা হয় ভবাঙ্গ। এ ধরনের চিত্ত সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ধরা দেয় গভীর ঘুমের সময়ে, যখন কোনো স্বপ্ন দেখা যায় না, তখন। তবে জেগে থাকা অবস্থায়ও ক্ষণে ক্ষণে এই চিত্ত উৎপন্ন হয় এবং সচেতন হয়ে কোনো বিষয়বস্তু সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়ার সময়েও অসংখ্যবার এই চিত্ত উৎপন্ন হয়ে আবার বিলীন হয়ে যায়। এখানে ভব মানে হচ্ছে জীবন, আর অঙ্গ মানে হচ্ছে উপাদান বা অংশ; তাই ভবাঙ্গকে মাঝে মাঝে জীবন-প্রবাহ, অথবা অবচেতনতা হিসেবে লেখা হয়, কারণ স্বাভাবিক অবস্থায় এর সচেতনতার বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্মরণ করা যায় না, এটি এতই সুক্ষ্ম।
কোনো এক জীবনের প্রথম চিত্তকে বলা হয় পুনর্জন্মদায়ী চিত্ত বা প্রতিসন্ধি চিত্ত, আর জীবনের সর্বশেষ চিত্তকে বলা হয় মরণ চিত্ত। এই দুটো চিত্ত ভবাঙ্গের মতোই একই ধরনের ফল চিত্ত এবং এই তিনটি চিত্তেরই সচেতনতার বিষয়বস্তু বা আলম্বন হচ্ছে একই। পুনর্জন্মদায়ী চিত্তে যদি অলোভ, অদ্বেষ বা অহিংসা এবং অমোহ বা জ্ঞান বিদ্যমান থাকে, তখন সেটি হচ্ছে ত্রিহেতুক। আর সেই চিত্তে যদি কেবল অলোভ এবং অমোহ থাকে, তখন সেটি হচ্ছে দ্বিহেতুক। যদি সেখানে অলোভ, অদ্বেষ, অমোহ- এই তিন কুশল মূলের কোনোটাই থাকে না, তখন সেটি হচ্ছে অহেতুক। কেবল ত্রিহেতুক পুনর্জন্মদায়ী চিত্ত নিয়ে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তিই ধ্যান, নির্বাণের পথ বা মার্গ এবং সেই নির্বাণগামী পথে চলার ফল লাভ করতে পারে।
Leave a Reply