মানব জীবন বড়ই দুর্লভ। অনেক পূণ্য প্রভাবে
আমরা এই মনুষ্যজন্ম লাভ করেছি। পশু, পক্ষি,
গরু,ছাগল কত প্রাণী এই দুনিয়ায় আছে।
তাদের জ্ঞান শক্তি নেই। তারা উন্নত
জীবন লাভ থেকে বঞ্চিত। তাদের সৎ কর্ম করার ক্ষেত্রও নেই। মানুষের জ্ঞান ও চিন্তা শক্তি আছে।
চিন্তা শক্তি দ্বারা মানুষ ভাল মন্দ বুঝতে পারে।সৎ চিন্তা দ্বারা মানুষ নৈতিক জীবন গঠন করতে পারে। বুদ্ধ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে মানব
জীবনের নৈতিক উপদেশ প্রদান করেছেন।
নিম্নে কিছু উপদেশ সংক্ষেপে তুলে ধরছি…
১) আত্ননির্ভরশীল হও। আত্নপ্রত্যয়ী হও আত্নশরণই শ্রেষ্ট শরণ।
২) দুষ্কর্ম পরিত্যাগ করে সৎ কর্ম সম্পাদন
কর। কায় , বাক্য ও মনে সংযম হও। মন
থেকেই সৎ কর্ম ও দুষ্কর্মের ইচ্ছশক্তি উতপন্ন হয়। প্রসন্ন মনে কথা বললে ছায়ায় ন্যায় সুখ প্রদান করে। দুষ্ট মনে কাজ করলে দুঃখ ভোগ করতে হয়।
৩) জীবে দয়া ও মহামৈত্রীই বুদ্ধদেশনার বৈশিষ্ট্য। মা যেমন তাঁর একমাত্র ছেলেকে প্রাণ দিয়ে রক্ষা করে। সেরুপ সকল প্রাণীর প্রতি অপ্রমেয় মৈত্রী পোষণ করবে। এটি মানসিক সৎ কর্ম।
৪) মিথ্যা , লাগানো কথ , কটুক্তি ,ব্রিথাবাক্য বলা থেকে বিরত হও। সত্য ,প্রিয় , মিষ্টি ও অর্থপূর্ণ বাক্য বল। এগুলো সাম্যক বাক্যের অন্তর্গত।
৫) অস্ত্র, প্রাণী, মাংস, নেশা , বিষ -বাণিজ্য করবে না। এগুলো মিথ্যাজীবিকা। ধর্মের পরিপন্থী।
৬) হিংসা ত্যাগ করে সকলের প্রতি মমতাশীল হও। পরের দুঃখে দঃখী হও। পরের সুখে সুখী হও। দুঃখকে সমভাবে দেখ। এ চারটি যথাক্রমে মৈত্রী, করুণা, মুদিতা ও উপেক্ষা ভাবনা। যার নাম ব্রহ্মবিহার।
৭) মূর্খের সেবা করবে না। পণ্ডিতের সান্নিধ্যে যাবে। পূজনীয় ব্যক্তিকে পূজা করবে।
৮) মাতা পিতা , স্ত্রী পুত্রের ভরণপোষন করবে। সত্য বিষয়ে জ্ঞান লাভ করবে। বিবিধ শিল্প শিক্ষা করবে।
৯) ক্ষমাশীল , গুরুজনের আদেশ পালনে সুবাধ্যতা , শীলগুণসম্পন্ন ভিক্ষু – শ্রামণদের
দর্শন ও ধর্মালোচনা করবে।
১০) পাপী বন্ধু ও নিক্রিষ্ট ব্যক্তির সংসর্গে থাকবে না। কল্যাণমিত্র ও প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিরদের সান্নিধ্যে
থাকবে।
১১) দুশ্চরিত্র ও অসমাহিত চিত্তে শত বছর
বেঁচে থাকার চেয়ে সতচরিত্র ও ধ্যানী ব্যক্তির একদিনের জীবনও শ্রেয়।
১২) বর্ষাকালে এখানে, শীত – গ্রীষ্মে ওখানে বাস করবো – মূর্খরা এভাবেই চিন্তা করে। শুধু জানে না জীবন কখন কোথায় শেষ হয়ে যাবে।
১৩) নিজেকে নিয়ন্ত্রণ কর। তারপর অন্যকে অনুশাসন কর। নিজে নিয়ন্ত্রিত হলে অন্যকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করাই কঠিন।
১৪) চিন্তার প্রতিফলন ঘটে স্বভাব বা প্রকৃতিতে। যদি কেউ মন্দ অভিপ্রায় নিয়ে কথা বলে বা কাজ করে দুঃখ তাকে অনুগমন করে। আর কেউ যদি সুচিন্তা নিয়ে কথা বলে বা কাজ করে সুখ তাকে ছায়ার মত অনুসরন করে।
১৫) আলস্য ও অতিভোজের দরুন স্থূলকায় নিদ্রালু হয়ে বিছানায় গড়াগড়ি দেয়া স্বভাবে পরিণত হলে সেই মূর্খের জীবনে দুঃখের পুনঃ পুনরাবৃত্তি ঘটবে।
১৬) যিনি অস্থিরচিত্ত , যিনি সত্যধর্ম অবগত নন , যার মানসিক প্রসন্নতা নেই ,তিনি কখনো প্রাজ্ঞ হতে পারেন না।
১৭) প্রাজ্ঞ ব্যক্তি কখনো নিন্দা বা প্রশংসায় প্রভাবিত হয় না।
১৮) রণক্ষেত্রে সহস্রযোদ্ধার ও বিজয়ীর চেয়ে রাগ – ক্রোধ বিজয়ী বা আত্মজয়ী বীরই বীরশ্রেষ্ঠ।
১৯) কাউকে কটু কথা বলবে না। কারণ সে –
ও কটু প্রতু্ত্তর দিতে পারে। উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় তোমার জন্যেও কষ্টদায়ক হবে। দন্ডের প্রতিদন্ড তোমাকেও স্পর্শ করবে।
২০) কোনো পাপকেই ক্ষুদ্র মনে করো না। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাপই জমা হতে হতে মূর্খের পাপের ভান্ড পূর্ণ করে ফেলে।
২১) মূর্খরা ‘ আমার পুত্র , আমার অর্থ, আমার
ধন’ এই চিন্তায় যন্ত্রণা ভোগ করে। যখন সে নিজেই নিজের না তখন পুত্র বা ধন তার হয় কিভাবে ?
২২) ভালো কাজ সবসময় কর। বারবার কর।
মনকে সবসময় ভালো কাজে নিমগ্ন রাখো।
সদাচরণই স্বর্গসুখের পথ।(পাপবজ্ঞোঃ১১৮)
আপনি সুখে থাকতে চানতো গৌতম বুদ্ধের এই বানীগুলি আপনার জীবনে প্রয়োগ করুন, দেখবেন আপনিই এক জন প্রকৃত মানুষরুপে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন।
Leave a Reply