ঈদ শেষে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। ঈদের তিন দিন ও সাপ্তাহিক দুই দিনের ছুটি শেষে গতকাল রবিবারই ছিল প্রথম কর্মদিবস। ফলে এদিন সকাল থেকেই বাস ও রেলস্টেশন এবং লঞ্চ টার্মিনালে ছিল নগরে ফেরা মানুষের উপচে পড়া ভিড়। তবে রাজধানীকে তার চিরচেনা রূপে ফিরতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে। কেননা অনেকেই পাঁচ দিনের সঙ্গে বাড়তি ছুটি যোগ করে এখনো ঢাকার বাইরে স্বজনদের সঙ্গে অবস্থান করছে।
রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল ও কল্যাণপুরের কাউন্টারগুলো ঘুরে নগরে ফেরা মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্তরবঙ্গ থেকে ফিরতে খুব একটা ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না। কারণ ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে কোনো যানজট নেই। তবে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে বাসগুলোকে। এতে দক্ষিণবঙ্গ থেকে বাসে আসা যাত্রীদের ঢাকায় ফিরতে অতিরিক্ত চার-পাঁচ ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে।
ফরিদপুর থেকে গতকাল সকাল ৭টায় ছেড়ে আসা সাউথ লাইন পরিবহনের একটি বাস গাবতলী টার্মিনালে পৌঁছয় বিকেল ৩টায়। এই বাসের যাত্রী ইমরান হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সমস্যা শুধু ফেরিঘাটে। আমাদের বাসটি চার ঘণ্টা আটকে ছিল। কমপক্ষে ৫০০ গাড়ি সিরিয়ালে রয়েছে। দু-এক ঘণ্টা দেরিতে হলেও আজ (গতকাল) থেকে অফিস করতে চেয়েছিলাম; কিন্তু ফেরিঘাটে জটের কারণে তা আর সম্ভব হলো না।’
গাবতলীর বিভিন্ন কাউন্টারে দায়িত্বরত পরিবহনকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শনিবার ঢাকামুখী যাত্রীর চাপ ততটা না থাকলেও গতকাল সকালে বেশ ভিড় ছিল। হানিফ পরিবহন কাউন্টারের কর্মী নাজমুল জানান, আজ (রবিবার) সকালের মধ্যে তাঁদের পরিবহনের প্রায় ৫০টি বাস দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে গাবতলীতে পৌঁছানোর কথা ছিল; কিন্তু এসেছে মাত্র ১৮টি। ফেরিঘাটে প্রচণ্ড জ্যাম। এ অবস্থায় একটি গাড়ির পক্ষে দিনে একটি সিঙ্গেল ট্রিপ দেওয়াই কষ্টকর হয়ে পড়ছে।
জানা যায়, কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া ঘাটে নাব্য সংকটের কারণে দক্ষিণবঙ্গের অনেক গাড়িই আসছে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া হয়ে। ফলে ওই ঘাটে গাড়ির চাপ বাড়ছে। এতে যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বিশেষ করে দর্শনা, যশোর, মাগুরা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুরসহ বিভিন্ন রুটের যাত্রীদের ফেরিঘাটে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
তবে উত্তরবঙ্গের যাত্রীরা জানাল স্বস্তির কথা। গতকাল দুপুরে কল্যাণপুর কাউন্টারে নীলফামারী থেকে আসা শ্যামলী পরিবহনের যাত্রী জুয়েল হাসান বলেন, ‘সাধারণ সময়ে আসতেই ছয় থেকে সাত ঘণ্টা লেগে যায়। তবে আজ আসতে এর চেয়ে দেড় ঘণ্টা বেশি লেগেছে।’
কমলাপুর স্টেশনে গতকাল সকালে আসা সব কটি ট্রেনেই যাত্রীর উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনগুলোতে যাত্রীর ভিড় ছিল লক্ষণীয়। আর এলোমেলো শিডিউল ঈদের পরও স্বাভাবিক হয়নি। বেশির ভাগ ট্রেন কয়েক ঘণ্টা দেরি করে স্টেশন ছেড়ে এসেছে।
রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা আন্ত নগর সিল্কসিটি গতকাল ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে কমলাপুরে পৌঁছার কথা ছিল। সেটি এসে পৌঁছয় তিন ঘণ্টা ৫০ মিনিট দেরিতে, সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে। খুলনা থেকে ছেড়ে আসা আন্ত নগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ৫টা ৪০ মিনিটের বদলে স্টেশনে পৌঁছয় সকাল সাড়ে ৮টায়। নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৭টা ১০ মিনিটে কমলাপুরে পৌঁছার কথা থাকলেও সেটি বিলম্ব করেছে পাক্কা ছয় ঘণ্টা। একই অবস্থা দিনাজপুরের একতা এক্সপ্রেসেরও। ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছানোর কথা ছিল সকাল ৮টা ১০ মিনিটে। অথচ পৌঁছেছে দুপুর ১টা ২০ মিনিটে।
সদরঘাটে লঞ্চ টার্মিনালেও ছিল নগরে ফেরা মানুষের উপচে পড়া ভিড়। তবে অতিরিক্ত যাত্রী বহনের অভিযোগ ছাড়া তেমন কোনো ভোগান্তির কথা বলেনি কেউ। লঞ্চগুলো নিয়মমাফিক দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন ঘাট থেকে ছেড়ে আসছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় যাত্রাপথেও কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
বিআইডব্লিউটিএর পরিবহন পরিদর্শক এ বি এস মাহমুদ জানান, দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ছেড়ে আসা ৮১টি লঞ্চ গতকাল সকালে ঢাকায় সদরঘাটে ভিড়েছে। প্রতিটি লঞ্চেই ভিড় থাকলেও তা উপচে পড়া ছিল না।
Leave a Reply